কথাসাহিত্যের অলিগলি (হার্ডকভার)
কথাসাহিত্যের অলিগলি (হার্ডকভার)
৳ ৩৫০   ৳ ২৬৩
২৫% ছাড়
Quantity  

৯৯০ বা তার বেশি টাকার বই অর্ডারে ডেলিভারি চার্জ ফ্রি। কুপন: FREEDELIVERY

প্রথম অর্ডারে অতিরিক্ত ১০০ টাকা ছাড়;  ১০০০+ টাকার বই অর্ডারে। ৫০ টাকা ছাড়; ৫০০+ টাকার বই অর্ডারে। কুপন: FIRSTORDER

Home Delivery
Across The Country
Cash on Delivery
After Receive
Fast Delivery
Any Where
Happy Return
Quality Ensured
Call Center
We Are Here

কৈ ফি য় ত
সাহিত্য হচ্ছে আসলে লেগে থাকার ব্যাপার। বিশেষ করে কথাসাহিত্য। তার পেছনে উন্মাদ প্রেমিকের মতো লেগে থাকতে হয়। সে ধ্যান চায়। গভীর ধ্যান। ধ্যানের মধ্য দিয়ে তাকে পেতে হয়। নইলে সে ধরা দেয় না। পালিয়ে পালিয়ে বেড়ায়। একটা সময় বহু দূরে সরে যায়। শত চেষ্টা করেও তাকে আর ফিরিয়ে আনা যায় না। একজন কথাসাহিত্যিক কথাসাহিত্যের পেছনে যে সময় ব্যয় করেন সেই সময় যদি অর্থের পেছনে ব্যয় করতেন, তিনি হতেন দেশসেরা ধনীদের একজন। কিন্তু কথাসাহিত্যিক তা হতে চান না। তিনি কথার মালিক হতে চান। কথাসাম্রাজ্যের সম্রাট হতে চান। কথা দিয়েই তিনি সাম্রাজ্য নির্মাণ করেন। নির্মাণ করতে করতে তিনি তার দ্বিতীয় সত্তাকে আবিষ্কার করেন। নির্মাণ শেষে সেই সাম্রাজ্যের সিংহাসনে বসে তিনি মানুষকে আহ্বান করেন, ‘এসো! এখানেই মিলিত হয়েছে সমস্ত প্রজ্ঞার নির্যাস। এসো, আহরণ করো।’
আমি মূলত কথাসাহিত্যের একজন নগণ্য কর্মী। উপন্যাস লিখি। ‘লিখি’ না বলে ‘লেখার চেষ্টা করি’ বলাটাই সম্ভবত যথাযথ। উপন্যাসের নামে যা লিখি সত্যিকারার্থে তা আদৌ উপন্যাস হয়ে ওঠে কিনা সেটা অন্য প্রসঙ্গ। ব্যক্তিগতভাবে আমি উপন্যাস লেখাকেই জীবনের প্রধান কাজ বলে মনে করি। একটা উপন্যাস লিখব বলে বেঁচে থাকি, চাকরি করি, সংসার করি, খাইদাই, হাঁসি, কাঁদি, মেজাজটাকে ঠাণ্ডা করে রাখি, ঘুরে বেড়াই, ঘণ্টার পর ঘণ্টা টেবিলে বসে থাকি, শত শত পৃষ্ঠা পড়ি এবং নানা বিষয়ে লিখি। অর্থাৎ উপন্যাসকে কেন্দ্রে রেখেই আমার জীবনের চাকাটা ঘুরছে। প্রথম এবং সর্বশেষ প্রকাশিত বই দুটিও উপন্যাস। উপন্যাস লেখার স্বার্থে এই শহরে আমি নিজের জন্য একটি জগত তৈরি করে নিয়েছি। এই জগতটা পড়া এবং লেখার। সবসময় চেষ্টা করি জগতটার মধ্যে থাকতে। এই জগতের বাইরে গেলে আমার কাছে অস্বস্তি লাগে, ডাঙায় তোলা মাছের মতো হাঁসফাঁস করি, যেন দম বন্ধ হয়ে আসে। আমি দ্রুত আবার নিজের জগতে ফিরে আসি। উপন্যাস লেখায় মনোনিবেশ করি।
তাই বলে রোজ রোজ তো আর উপন্যাস লিখি না। লেখা হয়ও না। কিন্তু না লিখলে তো চলবে না, কিছু না কিছু তো লিখতেই হবে। বহু কষ্ট করে, জীবনের প্রচুর সময় ব্যয় করে যে জগতটা আমি নির্মাণ করেছি সেটা যাতে ভেঙে না পড়ে, লেখালেখির চর্চাটা যাতে অব্যাহত থাকে, লেখালেখি যাতে আমার কাছ থেকে দূরে সরে না যায়, সেজন্য আমাকে কারণে এবং অকারণে উপন্যাসের বাইরে নানা বিষয়ে লিখতে হয়। এই বইয়ে অন্তর্ভূক্ত লেখাগুলোর সব কটি উপন্যাস লেখার বইরে কারণে এবং অকারণে লেখা। যখন কোনো কারণে উপন্যাস লিখতে ইচ্ছে করে না, মানসিক শক্তিটা পাই না, তখনই আমি এধরনের লেখা লিখি। এগুলো একধরনের মুক্ত গদ্য। চিন্তার বহুমাত্রিক প্রকাশ। টুকে রাখা কথামালা, নিজের সঙ্গে আলাপ, স্বগত ভাষণ, অগ্রজকে অনুজ, দ্বিতীয় সত্তার সঙ্গে কথপোকথন, টুকে রাখা স্মৃতিমালা, পাঠ ও উপলব্ধি ইত্যাদি শিরোনামে এসব লেখার কোনোটি ফেইসবুকে পোস্ট করি, কোনোটি পত্রপত্রিকায় ছাপতে দেই, কোনোটি বা কম্পিউটারের নির্দিষ্ট পোল্ডারে সংরক্ষণ করে রাখি। ২০১৪ সালে একুশে বইমেলায় এ ধরনের কিছু লেখা নিয়ে ‘বাঁক বদলের কাল’ নামে জিনিয়াস পাবলিকেশন্স থেকে একটি বইও প্রকাশিত হয়। পরবর্তী বছরের জুন মাসে প্রথমে চৈতি আহমেদ, পরে কুহক মাহমুদ যখন প্রস্তাব দিলেন, এধরনের লেখাগুলো নিয়ে তো একটা বই হতে পারে, আমি ভাবলাম, হ্যাঁ, বই তো হতেই পারে, আগেও তো হয়েছে। কেন হতে পারবে না? লেখাগুলো আমি নিজের জন্য, নিজের লেখালেখির চর্চা অব্যাহত রাখার জন্য লিখেছি সন্দেহ নেই, তাই বলে আমরা ভাবনাগুলো কি পাঠককে জানাতে পারব না? অবশ্যই পারব। প্রত্যেক লেখক প্রথমে নিজের জন্যই লেখেন, কিন্তু লেখার পর সেটি আর নিজের থাকে না, পাবলিক পপার্টি হয়ে যায়। জ্ঞানের একক কোনো মালিকানা নেই। জ্ঞান জনসম্পদ। সুতরাং এসব লেখা নিয়ে বই হতেই পারে। কিন্তু ভয় হলো, লেখা বলতে যা বোঝায় এগুলো কি তার মধ্যে পড়ে? এসব লেখার মধ্যে কি জ্ঞানের কোনো কথা আছে? চিন্তার কোনো নির্যাস আছে? কে পড়বে এসব লেখা? কার কী উপকারে আসবে? দিস্তা দিস্তা কাগজের অপচয় করে কী লাভ? পরে ভাবি, পৃথিবীতে কত অপচয়ই তো হচ্ছে। কোথায় অপচয় নেই? একটি রাষ্ট্রের কথাই ধরি। রাষ্ট্র নিজেই তো অপচয়কারী একটি প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্র পরিচালনার নামে কোটি কোটি টাকা অপচয় হয়ে যাচ্ছে। উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে মারণযন্ত্র আবিষ্কারের জন্য যে পরিমাণ অর্থের অপচয় হচ্ছে তার সিকিভাগের একভাগও তো সারা জীবনে আমি উপার্জন করতে পারিনি। শুধু চিত্তবিনোদনের জন্য মানুষের অপচয় কি কম? ধর্মের নামে অপচয়ের কথা না হয় থাক। পৃথিবীর অন্য দেশের কথাও না হয় বাদ দেই, আমাদের এই ঢাকা শহরটার কথাই ধরি। গুলশান, বনানী, বারিধারা ও ধানমণ্ডিতে প্রতিদিন যে পরিমাণ অপচয় ঘটছে তা দিয়ে একটা বিশাল জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক স্বাবলম্বীতা আনায়ন সম্ভব। শহরের রাস্তায় এই যে শত শত প্রাইভেট কার, তার মধ্যেও কি অপচয় কম? একটা মানুষকে, শুধু একটা মানুষকে বহন করার জন্য শত শত টাকার তেল পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। টেলিভিশনগুলোও কি অপচয় করছে না? দেশে এত এত টেলিভিশন, কয়টা দেখে মানুষ? প্রতিদিন এত এত পত্রিকা বেরুচ্ছে, কয়টা পড়ে মানুষ? এত এত রেডিও, কয়টা শোনে মানুষ? সুতরাং অপচয় সর্বত্র। সেক্ষেত্রে আমি এক নগণ্য কথার সাধক, আমার চিত্তবিনোদনের জন্য, আমার একটি বই প্রকাশের জন্য কিছু অর্থ অপচয় না হয় হলোই! অপচয়টা তো বইয়েরই জন্য, অন্য কোনো কিছুর জন্য তো নয়। মানুষ তার কল্যাণের জন্য পৃথিবীতে যত উপাদান আবিষ্কার করেছে বই তার মধ্যে প্রধান। আমার এ বইটি অন্যের উপকারে না আসুক, লেখক হিসেবে আমার উপকারে তো আসবে। আমার তো লাভ আছে। কীভাবে? এই বইয়ের লেখাগুলো কম্পিউটারে আছে, ই-ইমেইলেও সংরক্ষিত আছে। কিন্তু কম্পিউটার তো যে কোনো সময় নষ্ট হয়ে যেতে পারে, ই-মেইলেরও বিপর্যয় ঘটা বিচিত্র কিছু নয়। প্রকৃতিরও তো বিপর্যয় ঘটে, মানবসৃষ্ট ইন্টারনেট কোন ছার! বিপর্যয় ঘটলে লেখাগুলো তো আর খুঁজে পাব না। চিরকালের জন্য হারিয়ে যাবে। যদি কাগজে মুদ্রিত হয়ে যায় তখন আর হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। আমার কাছ থেকে হারিয়ে গেলেও কারো না কারো কাছে থেকে যাবেই। জীবনের কোনো একটা সময় আমি যদি পেছনে ফিরে তাকাতে চাই, এ বইটির দিকে তাকালেই হবে। বই তো একটা মুকুর। কালের মুকুর। এই মুকুরে কালকে দেখা যায়। আমিও আমার ফেলে আসা কালকে দেখতে পাব। লেখালেখির যে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এসেছি একটা সময় সেই পথটাকে দেখতে পাব এই মুকুরে। লাভটা এখানেই। মূলত এই লাভের কথা চিন্তা করেই লেখাগুলোকে নিয়ে একটা পাণ্ডুলিপি গোছাতে উদ্যোগী হলাম। বইটি প্রকাশ করায় অনুপ্রাণনের প্রকাশক আবু এম ইউসুফকে ধন্যবাদ। শিল্প-সাহিত্যের প্রতি তাঁর ভালোবাসা আমাকে মুগ্ধ করে। অনুপ্রাণিতও হই। একই সঙ্গে ধন্যবাদ জানাই কবি কুহক মাহমুদকে। মূলত তার তৎপরতাতেই লেখাগুলো বইয়ের আকার পেল। না, এই বইয়ের সব লেখা কথাসাহিত্য নিয়ে নয়, একটা বড় অংশ রয়েছে সাহিত্য ও সংস্কৃতি নিয়ে। তাহলে বইটির নাম ‘কথাসাহিত্যের অলিগলি’ হলো কেন? প্রথমত, অন্য কোনো নাম খুঁজে পাইনি বলে। দ্বিতীয়ত, আগেই বলেছি, কথাসাহিত্য চর্চা অব্যাহত রাখার জন্যই আমি এ ধরনের লেখা লিখি। সুতরাং এসব লেখা প্রকারান্তরে কথাসাহিত্যেরই অন্তর্গত। বলে রাখা ভালো, এ ধরনের যত গদ্য লিখেছি তার সব কিন্তু বইটিতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি। শুধু শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সংশ্লিষ্ট লেখাগুলো নিয়েই এ বই। লেখাগুলো ২০১৪ ও ২০১৫, এই দু-বছরের মধ্যে লেখা। আরো বলে রাখি, বইটিতে ব্যক্তকৃত মতামতগুলো একান্তই আমার। এগুলো আমার প্রাথমিক উপলব্ধি, প্রাথমিক মতামত। এই মত থেকে ভবিষ্যতে আমি সরেও যেতে পারি। কেনন চিন্তা সততই পরিবর্তনশীল। আর, আমার মতের সঙ্গে কারো দ্বিমত থাকতেই পারে। থাকাটাই স্বাভাবিক। আমি বলছি না আমি যা লিখেছি তা-ই সত্য। সত্য আপেক্ষিক। আমি শুধু আমার উপলব্ধিগুলো জানালাম। অন্যের ভিন্নতর উপলব্ধি থাকতেই পারে। যদি বড় ধরনের কোনো ভ্রান্তি থাকে, প্রিয় পাঠক, জানাবেন। আমি শুধরে নেব। সর্বমানবের সম্মিলিত সঙ্গীত-উৎসবে মুখরিত হোক সমস্ত পৃথিবী।
স্বকৃত নোমান
ফেব্রুয়ারি, ২০১৫

Title : কথাসাহিত্যের অলিগলি
Author : স্বকৃত নোমান
Publisher : অনুপ্রাণন প্রকাশন
ISBN : 9789849136224
Edition : 1st Published, 2015
Number of Pages : 160
Country : Bangladesh
Language : Bengali

স্বকৃত নোমান। কথাসাহিত্যিক। জন্ম ১৯৮০ সালের ৮ নভেম্বর, ফেনীর পরশুরাম উপজেলার সীমান্তবর্তী বিলোনিয়ায়। জ্ঞানার্জন ও লেখালেখিকে জীবনের প্রধান কাজ বলে মনে করেন। স্বভাবে অন্তর্মুখী, যুক্তিবাদী ও প্রকৃতিমনস্ক। প্রকাশিত উপন্যাস রাজনটী, বেগানা, হীরকডানা, কালকেউটের সুখ, শেষ জাহাজের আদমেরা। গল্পগ্রন্থ নিশিরঙ্গিনী, বালিহাঁসের ডাক। পুরস্কার এইচএসবিসি-কালি ও কলম পুরস্কার ২০১১, ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল হুমায়ূন আহমেদ তরুণ সাহিত্যিক পুরস্কার ২০১৫, শ্রীপুর সাহিত্য পুরস্কার ২০১৫, এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ুন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৬। বর্তমানে বাংলা একাডেমিতে কর্মরত।


If you found any incorrect information please report us


Reviews and Ratings
How to write a good review


[1]
[2]
[3]
[4]
[5]