
৳ ৫৫০ ৳ ৪৬৮
|
১৫% ছাড়
|
Quantity |
|
৯৯০ বা তার বেশি টাকার বই অর্ডারে ডেলিভারি চার্জ ফ্রি। কুপন: FREEDELIVERY
প্রথম অর্ডারে অতিরিক্ত ১০০ টাকা ছাড়; ১০০০+ টাকার বই অর্ডারে। ৫০ টাকা ছাড়; ৫০০+ টাকার বই অর্ডারে। কুপন: FIRSTORDER
একাডেমিক বইয়ে ১০% পর্যন্ত ছাড়





বাংলাদেশে র্যাপ মিউজিকের প্রচলন একুশ শতকের প্রথম দশক হলেও জনপ্রিয় এই ধারার গানের উৎপত্তির ইতিহাস বেশ পুরোনো। র্যাপ মিউজিককে হিপ-হপ মিউজিকও বলা হয়। একটি বিশেষ শ্রেণির মিউজিক ও সাংস্কৃতিক ঘরানা হিসেবে হিপ-হপের জন্ম। বিশ শতকের ষাটের দশকের শেষের দিকে ও সত্তরের দশকের শুরুতে নিউইয়র্কের সাউথব্রোনস্ক এলাকায় হিপ-হপ বা র্যাপ মিউজিক আত্মপ্রকাশ করে। তবে এই সঙ্গীত মূলত আফ্রিকান-আমেরিকান, আফ্রো-লেটিন ও আফ্রো-কেরিবিয়ান সঙ্গীতের নির্যাসকে ধারণ করে। মূলত এর জনপ্রিয়তা তরুণদের মধ্যে। রাষ্ট্রযন্ত্রের জবরদস্তি-নিষ্পেষণ-বৈষম্য ও সামাজিক অসন্তোষ র্যাপ গানের মূল কারণ হিসেবে কাজ করে। বর্ণবাদের বিরুদ্ধে দ্রোহপ্রকাশেও র্যাপ গান এক শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে থাকে। হিপ-হপ মিউজিক আফ্রিকান বামবাতা ও ইউনিভার্সাল জুলু জাতির নেতৃত্বে মাদক ও ভায়োলেন্স বিরোধী সামাজিক আন্দোলন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ফলে ব্ল্যাক কমিউনিটির পরিবেশনার মাধ্যমেই র্যাপ সঙ্গীত ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ক্রমান্বয়ে সঙ্গীতের এই ধারা হিপ-হপ কালচারের একটি ধারা সৃষ্টি করে যাতে চারটি মূল উপাদান যুক্ত থাকে: ১. র্যাপিং ২. টার্নটেবিল স্ট্রেচিং (মঞ্চে জোর দিয়ে ঘোরা) ৩. ব্রেকড্যান্সিং ও ৪. গ্রাফিতি আঁকা ও লেখা। অর্থের জোগান ও গ্রহণযোগ্যতার অভাবের জন্য ১৯৭৯ সালের আগে হিপ-হপ মিউজিক রেডিও বা টেলিভিশনে প্রচারের জন্য অফিশিয়ালি রেকর্ড করা সম্ভব হয়নি।
র্যাপিং হচ্ছে মূলত অনুভূতি প্রকাশের জন্য কণ্ঠের একটি বিশেষ শৈল্পিক প্রকাশ যাতে ছন্দ, ছন্দময় কথা এবং রাস্তার আঞ্চলিক ভাষা থাকে। এটা সাধারণভাবে তীব্র ছন্দময় ভাষা ও বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়। কবিতার সঙ্গে এখানেই র্যাপ গানের পার্থক্য। আধুনিক র্যাপ মিউজিকের অগ্রদূত হচ্ছে ব্লুজ ও জাজ স্টাইলের বৈশিষ্ট্যযুক্ত পশ্চিম আফ্রিকান গ্রিওট ঐতিহ্য। র্যাপ গান বিস্তৃত হিপ-হপ কালচারের একটি অংশ হিসেবে বিকশিত হয়েছে। তবে হিপ-হপ মিউজিক টার্মটি র্যাপ মিউজিকের প্রতিশব্দ হিসেবে প্রায়শই ব্যবহৃত হয়।
বাংলাদেশে উচ্চবিত্ত-উচ্চ মধ্যবিত্ত শহুরে শিক্ষিত তরুণদের বাইরে র্যাপের চর্চা ও আবেদন ছিলো না বললেই চলে। প্রসার এত ক্ষুদ্র যে তা বৃহত্তর সাংষ্কৃতিক পরিমণ্ডলে সেই অর্থে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। ফলে বাণিজ্যিক সফলতা আসেনি, হয়ত সে চিন্তাও র্যাপারদের মধ্যে ছিল না। একটি নির্দিষ্টি উচ্চবিত্ত গোষ্ঠীর তরুণ-যুবকদের বিনোদন হিসেবেই র্যাপ আত্মপ্রকাশ পেয়েছিল। ১৯৯৩ সালে আশরাফ বাবু, পার্থ বড়ুয়া আর আজম বাবু এই তিনজন ত্রিরত্নের ক্ষ্যাপা নামের একটি অ্যালবাম করেছিল যা তুলনামূলকভাবে শহুরে তরুণ-যুবকদের আকৃষ্ট করে। তাদের অ্যালবামটি বাংলা র্যাপের প্রথম অ্যালবাম। ২০০০ সালের পরে, সঙ্গীতের এই নতুন ধারা বাংলাদেশের তরুণ সমাজে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। বিশেষ করে শহুরে যুবকেরা র্যাপের মাধ্যমে নিজেদের চিন্তা-চেতনা, মতাদর্শ এবং সামাজিক অবস্থা প্রকাশ করতে শুরু করে। ২০০৪ সালে গঠিত হয় স্টোইক ব্লিস নামক হিপ-হপ ক্রু, যারা বাংলা এবং ইংরেজি ভাষার সমন্বয়ে একটি নতুন ফিউশন র্যাপ শৈলী সৃষ্টি করে। এই দলটি প্রথমে ব্লগের মাধ্যমে তাদের গান ছড়িয়ে দেয়। পরে বাংলাদেশে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার শুরু হলে গানটি ব্যাপক প্রচার লাভ করে। স্টোইক ব্লিস ২০০৬ সালে তাদের প্রথম অ্যালবাম Light Years Ahead প্রকাশ করে। প্রকাশের পরপরই অ্যালবামটি দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং বাংলাদেশের সঙ্গীত জগতে এক নতুন মাত্রা যোগ করে। এই অ্যালবামের মাধ্যমেই বাংলা র্যাপ মূলধারার সঙ্গীত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে শুরু করে।
একুশ শতকে বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনের একটি অন্যতম ভাষা হয়ে ওঠে বাংলা র্যাপ। নিরাপদ সড়ক আন্দোলন থেকে শুরু করে ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন স্তরে র্যাপ একটি প্রতিবাদী মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে, যেখানে চিত্রিত হয়েছে দেশীয় রাজনৈতিক অবস্থা, ঐতিহ্য, ভাষা, সংস্কৃতি এবং তরুণদের ক্ষোভের প্রতিফলন। বিশেষভাবে, ২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থান আন্দোলনের মধ্যে এই র্যাপ সঙ্গীত এক শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে উঠে এসেছে। র্যাপ গানগুলোতে একদিকে যেমন আন্দোলনের প্রতিবাদী ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, তেমনি অন্যদিকে রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্য এক ঐতিহাসিক দ্বন্দ্বের সূচনা ঘটানো হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় রক্তক্ষয়ী জুলাই অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোতে র্যাপারদের কণ্ঠে উচ্চারিত অকুতোভয় প্রতিবাদের ভাষা, বলিষ্ঠ সুরেলা আওয়াজ লাখো মানুষকে প্রেরণা দিয়েছে। মন্ত্রমুগ্ধের মতো মানুষ উজ্জীবিত হয়েছে। দুঃশাসনের লৌহকবাট ভাঙতে সাহস জুগিয়েছে। আন্দোলনকারী জনতা মুক্তির লক্ষ্যমুখে এগিয়ে যাওয়ার শপথ নিয়েছে। র্যাপাররা শাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে, হুমকি-নির্যাতন, জেল-জুলুমের ভয়কে উপেক্ষা করেই মানুষকে প্রেরণা জুগিয়েছে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার। এককথায় জুলাই অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের র্যাপ গায়কদের অবদান ছিল শ্রদ্ধা করার মতো। ফলে আমরা বাংলাদেশের র্যাপসঙ্গীতের ওইসব দামাল গায়কদের ঐতিহাসিক অবদানকে দেশবাসীর সামনে দলিল হিসেবে উপস্থাপন করার প্রয়োজনীয়তা উপলদ্ধি করেছি। সেই প্রচেষ্টার ফলাফল এই বইটি।
জুলাই অভ্যুত্থানের পটভূমিতে বাংলাদেশের র্যাপসঙ্গীত নিয়ে প্রকাশিত প্রথম বই র্যাপ-চার। বইটিকে তিনটি পর্বে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম পর্বে থাকছে র্যাপ সঙ্গীতের বিবর্তন, ভঙ্গিমা ও সামাজিক-রাজনৈতিক চরিত্র নিয়ে পর্যালোচনা। দ্বিতীয় পর্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বশীল কয়েকজন র্যাপগায়কের সাক্ষাৎকার। এবং সবশেষে তৃতীয় পর্বে রয়েছে জুলাই অভ্যুত্থানের নির্বাচিত কিছু র্যাপসঙ্গীতের লিরিক্স। সময় স্বল্প ছিল বলে কিছু অস্পূর্ণতা ও ত্রুটি থেকে যেতে পারে। পরবর্তী সংস্করণে সেই সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা দূর করা হবে।
বাংলা র্যাপসঙ্গীত এগিয়ে যাক, র্যাপ গণমানুষের প্রতিবাদ-দ্রোহের কণ্ঠ ধারণ করুক বলিষ্ঠ নিনাদে।
Title | : | র্যাপ-চার |
Editor | : | ড. মিজানুর রহমান নাসিম |
Publisher | : | গ্রন্থিক প্রকাশন |
ISBN | : | 9789849976592 |
Edition | : | 1st Published, 2025 |
Number of Pages | : | 240 |
Country | : | Bangladesh |
Language | : | Bengali |
If you found any incorrect information please report us